বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা (Bigyan O Kusanskar Rachana)

আপনি কি অনলাইনে বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনাটি খুঁজছেন,

যদি তাই হয়,

আপনি একদম সঠিক পোস্টে এসেই উপস্থিত হয়েছেন।

অত্যন্ত যত্ন সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রবন্ধটি পড়ে পরীক্ষায় খাতায় ফুটিয়ে তুললেই ফুল মার্কস পাবেই!

প্রবন্ধ সংকেত – ভূমিকা,বিজ্ঞানমনস্কতা,কুসংস্কার,কুসংস্কারের সূচনা,বিভিন্ন কুসংস্কার,বিজ্ঞান শিক্ষার লক্ষ্য,কুসংস্কারের প্রতিবিধান,উপসংহার

ভূমিকাঃ-

১৬১০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারী মাস,১০ তারিখ। বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও ওইদিনই দূরবিনের সাহায্যে গ্রহগুলির মহাজাগতিক চলন স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করলেন, যার ফলে স্বর্গের ধারণাটাই গেল সম্পূর্ণরূপে পাল্টে বা নস্যাৎ হয়ে। বিজ্ঞান বারেবারেই আদিম বিশ্বাস, কুসংস্কারের আঁধারে ফেলেছে চড়া আলো – গ্যালিলিওর আবিষ্কার তারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। কুসংস্কার কখনোই যুক্তি মানে না আর বিজ্ঞানের ইমারতই তৈরি হয় যুক্তির ‘ইট’ দিয়ে। বোঝাই যাচ্ছে দুজনের সম্পর্ক মধুর নয়। প্রগতির পথে কুসংস্কার যখন বাধা হয়ে দাঁড়ায়, বিজ্ঞানের কাজ তখন তাকে স্বমূলে উপড়ে ফেলে দেওয়া।কারণ বিজ্ঞান কখনোই কুসংস্কারের বেড়া জালে আবদ্ধ থাকেনা।

বিজ্ঞানমনস্কতাঃ-

আমরা ‘বিজ্ঞান’ শব্দের অর্থ বলতে যা বুঝি বা জানি তা হলো ‘বিশেষ জ্ঞান’। যেকোনো বিষয় নিয়েই এই জ্ঞান থাকতে পারে, কিন্তু তা অবশ্যই হবে চারটি ধাপের পদ্ধতিতে যথা (১)পরীক্ষা (২) পর্যবেক্ষণ (৩) ফলাফল গ্রহণ ও (৪) সিদ্ধান্ত এই হল চারটি ধাপ। যুক্তিক্রমে সজ্জিত এবং নৈর্ব্যক্তিক জ্ঞানই বিজ্ঞানের অর্জন। যদি সমাজের ভিতর কাউকে দেখা যায় অসংলগ্ন কথা বলতে কিংবা তেমন আচরণ করতে, আমরা সেই ঘটনাকে ‘দৈবিক’ বা ‘ভৌতিক’ তকমা দেব না – বরং তাকে চিনব মানসিক অসুস্থতার নজির হিসেবে। ঝড়, ভূমিকম্প, কিংবা সূর্যগ্রহণের মতো ঘটনাগুলি প্রাকৃতিক সত্য, ‘দেবতার রোষ’ কিংবা ‘অশুভ শক্তির আস্ফালন’ নয়।

কুসংস্কারঃ-

অন্যদিকে ‘কুসংস্কার’ বস্তুটি পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের ধার ধারে না। তার সম্বল অন্ধবিশ্বাস, মনগড়া অলীক। চেতনা দিয়ে পুরোপুরি যাকে যায় না বোঝা তার প্রতি বিমুগ্ধ ভয় বানিয়ে নেয় আঁধারের সাম্রাজ্য। আধুনিক মনোবিজ্ঞানের মতে আমাদের মধ্যে সুপ্ত ‘ডার্ক সোর্স'(dark Source) ই এর অন্যতম উপাদান। বংশপরম্পরায় এই বিশ্বাস লালিত হয় এবং সামাজিক রীতি হয়ে ওঠে। ঠিক এইভাবেই কুসংস্কার আমাদের মনে চিরতরে রয়েই যায়।

কুসংস্কারের সূচনাঃ-

আদিম মানুষ বলতেই মনে পড়ে গুহার গায়ে আঁকা জীবজন্তুর ছবি। এগুলির কিন্তু প্রাথমিক কারণ ছিল না শিল্প-সৃষ্টির। বরং একটি হরিণ কিংবা বাইসনকে আমাদের পূর্বপুরুষ এঁকেছে একটি অলৌকিক বিশ্বাস থেকে। যাকে ‘যাদু বিশ্বাস’ ও বলা হয় যেতে পারে। ওই ছবিটি আসলে এক ‘আদিম ম্যাজিক’ যাতে ছবির পশুটি সহজে শিকারের আওতায় আসে। বহু জায়গায় আমরা দেখে থাকবো পশু, পাথর, উদ্ভিদকে ‘টোটেম’ হিসাবে পূজা করার চল।

প্রাকৃতিক শক্তিকে সন্তুষ্ট করবার জন্য আগুন জালানো, নাচগান,মন্ত্র উচ্চারণ এসবই হচ্ছে কুসংস্কারের পুরোনো দৃষ্টান্ত। এরই পাশে পাশে মানুষের অন্য হাতটি সবসময় ধরে থেকেছে বিজ্ঞান। কিন্তু আজও মানুষের মনে কুসংস্কারের দানা বর্তমান রয়েছে।

বিভিন্ন কুসংস্কারঃ-

পঞ্জিকা খুললেই দেখা যাবে হাঁচি, কাশি, টিকটিকির ডাক,গ্রহণ,পূর্ণিমা – অমাবস্যা নিয়ে নানারকম বিধি নিষেধ।গ্রামাঞ্চলে এখনো অমিল নয় নরবলি, ডাইনি পোড়ানো, তুকতাকের মতো বীভৎস ঘটনা। অলৌকিক শক্তির ওপর অযৌক্তিক আস্থাই এর মূলে। জ্যোতিষ ব্যবসার রমরমা কিছু কম নয় শহরগুলিতে। আংটি নিয়ে ভাগ্য যে পাল্টানো যায় না এ তথ্যটি মানেন না বহু শিক্ষিত মানুষ। এই রকম আমরা পাচ্ছি ইউরোপ আমেরিকার মত প্রগতিশীল দেশে।কখনো শয়তানের অস্তিত্ব কল্পনায়, কখনো ডারউইনের বিবর্তনবাদ খারিজ করায়।কালো বিড়াল, ৬৬৬ সংখ্যা কিংবা অশুভ ১৩ কে ডরাই তাদের সমাজও।আরর এইভাবেই আমরা কুসংস্কারগ্রস্ত হয়ে রয়েছি।

বিজ্ঞান শিক্ষার লক্ষ্যঃ-

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী লিখেছিলেন, শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক পন্থায় দরকারে রাশিবিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে বিচার করতে হবে ফলিত জ্যোতিষকে আরোপিত দৃষ্টান্ত বা চাতুরি চলতে পারে না। যুক্তির বিচারে না টিকলে তাকে ‘বাতিল’ বলে জানতে হবে। এই মূল্যবোধই বিজ্ঞান শিক্ষার পাথেয়। বিজ্ঞান জানার অর্থ শুধু পুঁথিগত লেখাপড়া নয় বরং নির্মোহ দৃষ্টি অর্জন যা দিয়ে প্রকৃতিকে বোঝা যাবে ‘কারণ’ ও ফলাফলের ভিত্তিতে। তার লক্ষ্য স্বচ্ছতা, সমস্যাকে ধোঁয়াটে ও জটিল করে তোলা নয় কিছুতেই। আর এইভাবেই বিজ্ঞান আমাদের সবকিছু যুক্তি ও তর্কের মধ্য দিয়ে যাচাই ও পরখ করে নেওয়ার পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করছে।

কুসংস্কারের প্রতিবিধানঃ-

কম দিন হলো না, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বহু উদ্যোগই নেওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে। তাও সম্ভব হয়নি ধর্মপূজা ও এমনকি সাম্প্রদায়িকতা বীজটি নির্মূল করা। স্কুল,পরিবার, গণমাধ্যম সবাইকে এগোতে হবে এর প্রতিবিধানে। বুনিয়াদি স্তর থেকে শিশুর মনে যদি জাগিয়ে তোলা যায় বিজ্ঞান চেতনার আবেগ, কুসংস্কারের প্রতিবিধান সর্বস্তরে নিশ্চয়ই সম্ভব। ঠিক এভাবেই আমাদের প্রত্যেককে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবিধান গড়ে তুলতে হবে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কুসংস্কারে ডুবে না যায়।

উপসংহারঃ-

অতীতে মানুষ জানতো সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। যখন কোপারনিকাস ও গ্যালিলিও সৌরকেন্দ্রিক মহাজগতের ধারণা দিলেন জানা সত্যিকে সে নতুন করে মূল্যায়ন করল অর্থাৎ নিজেকে নমনীয় করে তুলতে পারল। চার্চের রোষে যদিও গ্যালিলিওকে সর্বসমক্ষে স্বীকার করতে হয়েছিল তিনি ভুল বলেছেন।নিভৃতে প্রৌঢ় বিজ্ঞানী জানিয়েছিলেন মনের কথা কিন্তু পৃথিবীটা এখনো ঘুড়ছে। তাঁর কথায় সত্যি হয়েছে। কুসংস্কারের বলয় ভেঙে বিজ্ঞানের যাত্রায় এভাবেই পথ করে নেই চিরকালই নেবে। আগামী প্রজন্ম এইভাবেই বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তাদের টার্গেটে পৌঁছে যাবে কোনো রকম কুসংস্কার ছাড়াই।

Leave a Comment