বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা/Banglar Utsab Prabandha Rachana

আপনি কি অনলাইনে “বাংলার উৎসব” প্রবন্ধ রচনাটি খুঁজছেন,

যদি তাই হয়,

আপনি তাহলে একদম সঠিক আর্টিকেলে এসে উপস্থিত হয়েছেন।

আমি এই পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি -অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় “বাংলার উৎসব” প্রবন্ধ রচনাটি।

আমার এই আর্টিকেলটি “বাংলার উৎসব” প্রবন্ধ রচনার জন্যে একটি দারুণ নোট। আপনি যদি এই প্রবন্ধটি পরীক্ষায় ঠিক এইভাবেই লিখতে পারেন তাহলে আপনি গ্যারান্টি ফুলমার্কস পাবেন -ই।

অতএব এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইল…..

ভূমিকাঃ-

উৎসব হল আনন্দময় অনুষ্ঠান আর আমরা বাঙালিরা উৎসব প্রিয়। ”বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ” – এই প্রবাদ আজ সর্বজনস্বীকৃত। মানুষ তার সংসার চক্রের নিরানন্দময় জীবন থেকে বাঁচবার জন্য প্রাণ ধারণের গ্লানি থেকে মুক্তি পাওয়ার মানসে উৎসবের পরিকল্পনা করে। উৎসবের আনন্দমুখর মুহূর্তগুলিকে বাঙালি ছড়িয়ে রেখেছে তার বিস্তৃত জীবনের আঙিনায়। বাঙালির উৎসব তাই আনন্দ সংগীতেরই সমারোহ। বাঙালির জীবনের একঘেঁয়েমি কাটানোর একমাত্র পন্থা এই উৎসব।

উৎসবের প্রেরণাঃ-

বাঙালি উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রীতি ও প্রেমের পূর্ণ বন্ধন, মানুষের সঙ্গে মানুষের আনন্দময় আত্মিক মিলন। মানুষ নিত্যনৈমিত্তিক কাজের মধ্যে ক্ষুদ্র কিন্তু উৎসবের দিন পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে বৃহৎ উৎসবের দিনে মানুষ যেহেতু সমস্ত ক্ষুদ্রতা, হীনতা,ক্লীবতার গণ্ডিকে অতিক্রম করতে পারে। তাই সেদিন মানুষ নিজেকে অপরের মধ্যে খুঁজে পায় বলে সেদিন আনন্দের দিন। উৎসবই বাঙালির জীবনে খুশির হাওয়া বয়ে আনে।

উৎসবের বিবর্তনঃ-

প্রাচীন যুগে উৎসবের মাহাত্ম্য ও উৎসবের রূপ ছিল ভিন্ন। আদিম মানুষ শিকার সেরে নির্দিষ্ট বাসস্থানে ফিরে এসে দলবদ্ধ হয়ে আগুন জ্বালিয়ে উৎসবের আনন্দে মেতে উঠত। তারপর সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ উৎসবের ক্ষেত্রে আরও বেশি আন্তরিক হয়ে উঠেছে। উৎসবের মধ্যে জড়িয়ে থাকে পারস্পরিক কল্যাণবোধ ও মঙ্গলবোধ। মানুষ উৎসবকে তার জীবনের সঙ্গে করে তুলেছে সম্পৃক্ত। কিন্তু দিন দিন আধুনিকীকরণের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বড্ড বেশি যান্ত্রিক ও কৃত্রিম হয়ে পড়েছে। পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে দেওয়াল তৈরি করেছে। ফলে উৎসবের আনন্দ বিলুপ্ত হতে বসেছে এবং তা নিতান্তই বিপণনে পরিণত হয়েছে। যেকারণে উৎসবের মাহাত্ম্য দিন দিন কমে যাচ্ছে।

উৎসবের বৈচিত্র্যঃ-

বাঙালির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র‍্যই তাদের উৎসবের বৈচিত্রকে সূচিত করেছে প্রাকৃতিক পরিবেশ,ধর্মাচরণ, জীবনধারার বৈচিত্র্য অনুযায়ী উৎসবের বৈচিত্র‍্য লক্ষ্য করা যায় যেমনঃ-

(ক) জাতীয় উৎসবঃ-

জাতীয় সংহতি ও ঐক্যকে এই উৎসবের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। যেমন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন, প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন, গান্ধীজি ও নেতাজির জন্মজয়ন্তী উদযাপন প্রভৃতি ভারতের জাতীয় উৎসব হিসেবে গণ্য।

(খ) সামাজিক উৎসবঃ-

বাঙালির উৎসবের মধ্যে সামাজিক উৎসবের সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। এই প্রকার উৎসবে সমাজে মানুষ বেশি করে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়। এইসব উৎসব হল বিবাহ, অন্নপ্রাশন, উপনয়ন শ্রাদ্ধানুষ্ঠান প্রভৃতি।

(গ) ধর্মীয় উৎসবঃ-

যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে যে উৎসব পালিত হয় তাই হল ধর্মীয় উৎসব। যেমন বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হলো দুর্গোৎসব। সমগ্র বাংলায় দুর্গাপূজা এক আলাদা আনন্দের রেশ নিয়ে আসে। দুর্গাপূজায় বাঙালি জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে একত্রিত হয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে। এছাড়াও অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব গুলি হল দোল উৎসব, রাস উৎসব, জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রি, বাসন্তী পূজা ইত্যাদি। অন্যদিকে বাঙালি মুসলমানদের সেরা উৎসব ঈদ। এছাড়াও মহরম ও অন্যান্য উৎসব পালিত হয়। খ্রিস্টানদের বড়দিন ও গুড ফ্রাইডে বড় ধর্মীয় উৎসব। বৌদ্ধদের বুদ্ধ পূর্ণিমা, শিখদের গুরু নানকের জন্মদিন ও ধর্মীয় উৎসব সময়সূচি অনুসারে সানন্দে পালিত হয়।

(ঘ) লোক উৎসবঃ-

বাংলায় নানা ধরনের লোক উৎসব প্রচলিত রয়েছে। যেমন অগ্রহায়ণ মাসে ধান উঠার সময় নবান্ন উৎসব, পৌষে শস্যসম্ভারে ঘর ভরে ওঠার পর পিঠেপার্বণ ও তুষ-তুষালি উৎসব পালিত হয়। এছাড়া বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়াতে পালিত হয় ‘ভাদু’,’টুসু’,’ইতু’ উৎসব।

উৎসবের গুরুত্বঃ-

প্রতিটি মানুষের জীবনে উৎসবের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক। বাঙালির সব উৎসবের মধ্যেই নিহিত রয়েছে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। উৎসবে থাকে না কোনো দুঃখ,ব্যথা,জড়তা, গ্লানি। তাই উৎসব সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষের মধ্যে সাম্য- মৈত্রী স্থাপন করে। জাতীয় উৎসবগুলি আমাদের দেখা প্রেমকে জাগ্রত করে। বিভিন্ন সামাজিক উৎসবগুলি মানুষের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন ঘটায়। অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠায় উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম কারণ সাম্প্রদায়িকতার ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এক সম্প্রদায়ের মানুষ অন্য সম্প্রদায়ের উৎসবে সামিল হয়। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের পারস্পরিক প্রীতি ও সৌহার্দ্য তাদের সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে তোলে। তাই একথা অনস্বীকার্য উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম।

উপসংহারঃ-

মানুষের নিত্যদিনের কর্মব্যস্ত একঘেয়ে জীবনের অবসাদ ও গ্লানি দূর করে উৎসব আনন্দের সঞ্চার করে। তবে প্রাচীনকালে উৎসবের যে গুরুত্ব ছিল বর্তমানে তা অনেকটাই লোপ পেয়েছে। পারস্পরিক ভাব বিনিময়, আত্মার সঙ্গে যোগস্থাপন, পারস্পরিক কল্যাণ কামনা আজকালকার উৎসবে দেখা যায়না বললেই চলে। পরিবর্তে এসেছে বাহ্যিক আরম্ভড়, লোক দেখানো কার্যকলাপ, বহিরঙ্গ বিলাস ও কৃত্রিমতা। উৎসবের আনন্দকে মাটি করে দিয়ে নিজেদের জাহির করার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। সব ঘৃণা -বিদ্বেষ, প্রতিযোগিতা ভুলে “দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে” – এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয় তবে উৎসবের গুরুত্ব পাবে এক স্বতন্ত্র মাত্রা। তখন উৎসব হবে মিলন শান্তি ও মৈত্রী বন্ধন যা বাঙালির গর্ব।

Leave a Comment