জাতীয় সংহতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ/Jātiya sanhati o bicchinnatabad Rachana

আপনি কি অনলাইনে ”জাতীয় সংহতি বিচ্ছিন্নতাবাদ” প্রবন্ধ রচনাটি খুঁজছেন,

যদি তাই হয়,

তাহলে আপনি একদম সঠিক আর্টিকেলে এসে উপস্থিত হয়েছেন।

আমি এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় “জাতীয় সংহতি বিচ্ছিন্নতাবাদ” প্রবন্ধ রচনাটি

আমার এই আর্টিকেলটি “জাতীয় সংহতি বিচ্ছিন্নতাবাদ” প্রবন্ধ রচনা জন্য একটি দারুন নোট। আপনি যদি এই প্রবন্ধটি পরীক্ষায় ঠিক এভাবেই লিখতে পারেন তাহলে আপনি গ্যারান্টি ফুল মার্কস পাবেন-ই।

অতএব এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে সহকারে প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইল……….

ভূমিকাঃ-

যুগে যুগে আমাদের দেশ ভারতবর্ষে এসেছে বহিরাগত জাতিরা যেমন শক,হুন,পাঠান, মুঘল এদের কেও ফিরে গেছে স্বদেশে, আবার মিশে গিয়েছে ভারতের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে। কবির ভাষায় – “নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান /বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।”

ভারতবর্ষ মিশ্রজাতির দেশ। বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যই আমাদের জাতীয় সংহতির মূল সুর। ব্রিটিশ শাসনের ২০০ বছরের ইতিহাস ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট সমাপ্ত হয়। যে তথ্য আমাদের সকলেরই জানা। এরপর ভারত স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যার সংহতি রক্ষার ক্ষেত্রে বিপদ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদ। আর এই বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রতিরোধ করতে না পারলে তা আমাদের কাছে ভয়ংকররূপে আত্মপ্রকাশ করবে।

জাতীয় সংহতির ভিত্তিঃ-

প্রথমতঃ- সংবিধানে স্পষ্টভাবেই জানানো হয়েছে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতার কথা। গণতান্ত্রিক ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামো প্রচলিত। সংসদীয় ব্যবস্থা ও ভোটাধিকার এই কাঠামো দৃঢ় করেছে।

দ্বিতীয়তঃ- ভারতের ধারাবাহিক ইতিহাস একটি অখন্ড ভূভাগের ইতিহাস,এই ধারণার উপর আমাদের জাতীয় সংহতির ধারণা গড়ে উঠেছে।

তৃতীয়তঃ- সংস্কৃতি তথা কৃষ্টির ঐক্য আমাদের জাতীয়তাবোধকে করেছে পুষ্ট,আত্মনির্ভর।

বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রাদুর্ভাবঃ-

সাংবিধানিক চিন্তাধারার পরিপন্থী হল বিচ্ছিন্নতাবাদ। রাজ্যগুলিকে টুকরো টুকরো করে ফেলা কিংবা সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্ন করে পৃথক রাষ্ট্র তৈরির লক্ষে বারে বারে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ-বিহার সীমান্তে ‘ঝাড়খন্ড আন্দোলন’ ‘কেএলও আন্দোলন’ ত্রিপুরায় টিএনভির আন্দোলন, উত্তরাঞ্চল বিদ্রোহ। মনিপুরে নাগাদের পৃথক রাষ্ট্রের দাবি এগুলি বিচ্ছিন্নতাবাদেরই নজির। ভারতের অতীত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৮৪ সালে নিহত হন ‘খালিস্তানি’ আন্দোলনের জেরে। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীও নিহত হন ১৯৯১ সালে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আত্মঘাতী হামলায়। বিচ্ছিন্নতার উদবেগ ও আতঙ্ক থেকে আজকের ভারতও মুক্ত নয় সেদিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

জাতীয় সংহতি বিনষ্টির কারণঃ-

ধর্মীয়, ভাষাগত, জাতিগত, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এমন নানা কারণই আছে জাতীয় সংহতি বিনষ্টের নেপথ্যে। ধর্মীয় মৌলবাদ দেশের শান্তি ও সংহতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে অন্যতম বিপজ্জনক উপাদান। একইসঙ্গে বহুভাষিক দেশ ভারতে ভাষার ভিত্তিতে পৃথক রাজ্য কিংবা রাষ্ট্রের দাবি প্রায়ই উঠেছে। উস্কানিমূলক মন্তব্য, রাজনৈতিক দলাদলি, বিদেশী শক্তির কূটনৈতিক মদত, সন্ত্রাসবাদ এসবই অখণ্ড ভারত রাষ্ট্রের কাছে একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। বর্ণবিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষ,অনুন্নয়নজনিত ব্যাপক ক্ষোভ, সরকারি তরফে গাফিলতি এবং দুর্নীতির উত্থান প্রতিটি বিষয়ই ইন্ধন যোগায় বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তাধারাকে। যা জাতীয় সংহতির বিনষ্টের মূলে।

সংহতি রক্ষায় উপায়ঃ-

স্বাধীন,গণতান্ত্রিক, সুসভ্য রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিয়েছে। জাতীয় সংহতিকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি এবং এজন্য দেশবাসীকে সচেতন থাকতেই হবে। ঐতিহ্যময় অতীত আদর্শের প্রতি অনুরাগ ও সংবিধানের প্রতি আনুগত্য হতে পারে সেই উপায়। অধিকার ও সম্পদের সমবন্টন এজন্য আবশ্যিক। প্রাদেশিক ভাষার প্রতি অবহেলা কখনোই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে সরকারকেও হতে হবে সতর্ক। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল ও জনকল্যাণকামী দেশ হিসেবে ভারত তবেই পারবে বিচ্ছিন্নতাবাদকে ঠেকাতে, অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখতে। বুনিয়াদি স্তর থেকে ছাত্রছাত্রীদেরও করে তুলতে হবে সংহতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল তবেই জাতীয় সংহতি টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

উপসংহারঃ-

আবহমানকাল ধরেই বহু জাতি, বহু কৃষ্টি,বহু লোকাচার সমবেত হয়েছে এই ভারতবর্ষে। কবির ভাষায় “এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।” এই ধারাকে অব্যাহত রাখলে নিশ্চয়ই মিলবে সাফল্য। জগৎসভার শ্রেষ্ঠ আসন আমাদের মাতৃভূমি আবার অর্জন করবে। আবার আমাদের মাথা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাবে।

Leave a Comment