একটি গাছ একটি প্রাণ প্রবন্ধ রচনা // Ekti gach Ekti Pran Prabandha Rachana

আপনি কি অনলাইনে একটি গাছ একটি প্রাণ প্রবন্ধ রচনাটি খুঁজছেন,

যদি তাই হয়,

আপনি তাহলে একদম সঠিক আর্টিকেলে এসে উপস্থিত হয়েছেন।

আমি এই পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি -অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’ প্রবন্ধ রচনাটি।

আমার এই আর্টিকেলটি ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’ প্রবন্ধ রচনার জন্যে একটি দারুণ নোট। আপনি যদি এই প্রবন্ধটি পরীক্ষায় ঠিক এইভাবেই লিখতে পারেন তাহলে আপনি গ্যারান্টি ফুলমার্কস পাবেন -ই।

অতএব এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার বিশেষ অনুরোধ রইল…..

একটি গাছ, একটি প্রাণ

ভূমিকাঃ-

‘বিশ্বপ্রাণের মুক ধাত্রী এই গাছ নিরবচ্ছিন্নকাল ধরে দ্যুলোককে দোহন করে, পৃথিবীর অমৃতভান্ডারের জন্য প্রাণের তেজ, প্রাণের রস, প্রাণের লাবণ্য সঞ্চয় করে’ – কথাগুলি লিখেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গাছের মতো নীরব বন্ধু আর কেউ-ই বা আছে আমাদের। আধুনিক সভ্যতার একটি নেতিবাচক দিক হলো পৃথিবী থেকে সবুজের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া। বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণের এই ক্রান্তিপর্বে জরুরি হয়ে উঠেছে বৃক্ষ সংরক্ষণ। একটি গাছকে বাঁচানো তাই একটি প্রাণকে রক্ষা করারই উপায়। তাইতো আমরা সচরাচর বলে থাকি ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’।

মানবজীবনে উদ্ভিদদের ভূমিকাঃ-

আমরা জানি বেঁচে থাকার অত্যাবশ্যিক উপাদান হলো অক্সিজেন। এই গ্যাস উদ্ভিদই সরবরাহ করে আমাদের। আবার কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে বায়ুমণ্ডলকে সুস্থ রাখে উদ্ভিদ। বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণেও আছে উদ্ভিদের বিপুল ভূমিকা। জীবনদায়ী জলের জোগান ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি গাছ সংখ্যায় কমে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য,বনজসম্পদ আমরা পাই উদ্ভিদকুলের থেকেই। ভূমিক্ষয় আটকায় গাছের শিকড়,পাশাপাশি বন্যপ্রাণীদের আবাস হিসেবেও তার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। গাছের সবুজ রং আমাদের চোখের সুস্থতার পক্ষেও জরুরি। তাইতো বলা হয় বৃক্ষ-ই আমাদের একমাত্র পরম বন্ধু যার অবদান কোনোদিনই ভুলবার নয়।

সভ্যতার আগ্রাসন ও বিপন্ন উদ্ভিদঃ-

বুদ্ধিমান, সচল, দ্বিপদ প্রাণী হিসেবে মানুষ গড়ে তুলেছে দানবীয় সভ্যতা। এর বলি হয়েছে অরণ্যভূমি। শিল্পাঞ্চল নির্মাণ থেকে নগরায়ণ – প্রতিটি কাজেই কাটতে হয় গাছ এবং অনেক সময় তা ঘটেছে নির্বিচারে। পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার অভাব ছিল এর মূলে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, একটি দেশের অন্তত শতকরা ৩০ ভাগ বনভূমি থাকা আবশ্যিক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যা বাস্তবায়িত হয়নি।

বৃক্ষচ্ছেদন ও পরিবেশের ভারসাম্যে বিপর্যয়ঃ-

গাছ কমে গেলে হ্রাস পাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। পাল্লা দিয়ে বাড়বে গ্রীনহাউস গ্যাসগুলিও। বিশ্ব উষ্ণায়ন আজ একটি বিপদ সংকেত হিসেবে উদ্যত। যার জন্য দায়ী কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি। সম্প্রতি আমাজনের দাবানল নষ্ট করেছে ব্যাপক বনভূমি। অনিয়মিত ঝড়-বৃষ্টি, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, জলস্তর বেড়ে ওঠা ও তুষারের গলন – এই সবকটিই হয় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টের কারণে। বৃক্ষের সংরক্ষণ আজ আবশ্যিক, নয়তো পৃথিবী গ্রহের পরিণতি হবে মৃত, শুষ্ক, ধূসর একটি গ্রহের মতোই। যেকারণে আমাদের অবশ্যই বৃক্ষরোপণ করতেই হবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে।

বৃক্ষ সংরক্ষণঃ-

প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা এই আওয়াজ তুলেছেন – ‘গাছ লাগাও প্রাণ বাঁচাও’। ১৯৫০ সালের জুলাই মাস থেকে আমাদের দেশেও চালু হয়েছে ‘বনমহোৎসব প্রকল্প’। স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে পরিবেশ বিজ্ঞান এবং উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে বৃক্ষরোপণে। সংরক্ষিত অরণ্য প্রভৃতি প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। বৃক্ষচ্ছেদন নিয়ে জারি হয়েছে আইন। নগরের বিশেষ অঞ্চল জুড়ে আজ বৃক্ষরোপণ বাধ্যতামূলক। আর এইভাবেই আমাদের প্রত্যেককে জোটবদ্ধ হয়েই বৃক্ষ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ করতেই হবে তবেই আমাদের পরিবেশ সবুজ হয়ে থাকবে এবং আমরাও মুক্ত অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারব যা আমাদের কাছে বেঁচে থাকার জন্য অমূল্য উপাদান।

উপসংহারঃ-

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেছিলেন, ‘গাছগুলো তুলে আনো, মাটিতে বসাও,…. আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার।’ আমাদের সচেতন হতে হবে একইরকম। বুঝতে হবে সকলের জীবনের স্বার্থেই উদ্ভিদ জগতকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার। একটি গাছ প্রকৃতির উপাদান হিসেবে অযথা নয় বরং প্রাণমণ্ডলের শ্বাস – প্রশ্বাসটুকু ধরে রাখতে সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু। আমাদের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণই পারে বিশ্বব্যাপী সবুজকে সুরক্ষা ফিরিয়ে দিতে। আর ঠিক এভাবেই আমরা আমাদের পৃথিবীকে সবুজায়ন করে রাখতে পারব।

Leave a Comment